ময়মনসিংহ নগরীর ৯ কিলোমিটার জুড়ে প্রবাহিত সেহড়া, মাকড়জানি, কাটাখালীসহ ছয়টি প্রধান খাল নগরীর জীবনরেখা হলেও এখন তা পরিণত হয়েছে ভোগান্তির কারণে। প্রতিবছর কোটি টাকা ব্যয়ে খননকাজ পরিচালনা করেও সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা রোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
গত পাঁচ অর্থবছরে খাল খনন ও সংস্কারে ব্যয় করা হয়েছে ২ কোটিরও বেশি টাকা:
২০২০-২১: ২৫.১৬ লাখ টাকা
২০২১-২২: ৫৪.৮৫ লাখ টাকা
২০২২-২৩: ৬০.৩০ লাখ টাকা
২০২৩-২৪: ৬৩.৯০ লাখ টাকা
তবে স্থানীয়দের মতে, এই ব্যয় শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। আকুয়া খালের পাশের বাসিন্দা শহীদুল ইসলামের ভাষ্য, "খননের নামে শুধু দায়সারা কাজ হয়, যা বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতেই ভেসে যায়।"
মূল সমস্যা:
১. খননের মাটি পুনরায় খালে ফেলা
২. দখলদারদের কারণে খাল সংকুচিত হওয়া
৩. স্থায়ী সমাধান না করে বার্ষিক অস্থায়ী ব্যবস্থা
৪. ময়লা-আবর্জনা অপসারণে ব্যর্থতা
বাড়েরা
এলাকার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, "একসময় খালের পানিতে গোসল করা যেত, এখন
দুর্গন্ধে পাশ দিয়ে হাঁটাই দায়।" শাহজাহান নামে আরেক বাসিন্দা যোগ করেন,
"খননের মাটি পাড়ে ফেলায় বৃষ্টিতেই তা আবার খালে চলে যায়।"
প্রশাসক মোখতার আহমেদ জানান, এডিবির সহায়তায় একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। "প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ২০২৫ সালের মধ্যে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে," বলেন তিনি। তবে সুজনের আলী ইউসুফ সতর্ক করেন, "অপরিকল্পিত খনন শুধু অর্থের অপচয়ই নয়, নাগরিক জীবনে চরম দুর্ভোগ ডেকে আনে।"
নগর পরিকল্পনাবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন:
খালের নকশা পুনর্বিন্যাস
দখল উচ্ছেদ অভিযান জোরদার
খননের মাটি সঠিকভাবে অপসারণ
স্থায়ী ড্রেনেজ সিস্টেম নির্মাণ
এই পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহবাসীর আশঙ্কা, আসন্ন বর্ষায় আবারও হাঁটু পানিতে ডুবে যাবে তাদের দৈনন্দিন জীবন। সিটি করপোরেশনের পদক্ষেপই এখন দেখার বিষয় - তারা কি শুধু টাকা ব্যয় করবে, নাকি নাগরিকদের ভোগান্তির স্থায়ী সমাধান দেবে?