ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সাবেক প্রধান নির্বাহী বনানী বিশ্বাসের অবৈধ সম্পদ অর্জন

ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বনানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, ও অবৈধভাবে অর্থ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে...


ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বনানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, ও অবৈধভাবে অর্থ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত এই কর্মকর্তাকে গত ১০ (সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে  নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বদলি করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সামনে আসে।

সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি অভিযোগ পড়ে। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায় তিনি দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) তার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ জেলার ৩৯, সিটি কর্পোরেশন রোডের মো. মাহমুদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে প্রধান উপদেষ্টা, কেবিনেট সচিব ও মন্ত্রণালয় এ অভিযোগ দায়ের করেন।

সূত্র জানায়, বনানী বিশ্বাসের প্রথমে ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর থানার এসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সেখানে ২ বছর ৭ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপরে তিনি এসিল্যান্ড হিসেবে ফুলপুরে ২ বছর ৯ মাস দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তীতে ইউএনও পদে পদোন্নতি পেয়ে ফুলবাড়ীয়া যোগদান করেন। সেখানে ইউএনও পদে ৪ বছর দায়িত্ব পালন করেন। পরে সচিব পদে জেলা ময়মনসিংহে বদলী হয়ে আসেন। জেলা পরিষদে ১ বছর ১১ মাস সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি উপ-সচিব পদে পদোন্নতি পান।

সূত্র জানায়, বনানী বিশ্বাস ২৪ তম বিসিএসে যোগদান করেন। জেলা পরিষদের সচিবের পদে পদোন্নতি পাওয়ায় পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে তদবির বাণিজ্যে এগিয়েছিলেন। ওই সময় তৎকালীন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন হারুন। হারুনের মদদে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন এবং সেখানে একটানা ২ বছর দায়িত্ব পালন করার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ আসে। যার কিছু তথ্য প্রমান রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে।

জানা যায়, বনানী বিশ্বাস ময়মনসিংহের কাশর অনন্যা প্রজেক্ট থেকে ১০ শতাংশের একটি প্লট ক্রয় করেন। যার মূল্য ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। এছাড়া- ময়মনসিংহ টাউন হলের মোড় মুমিনুন্নেছা কলেজ সংলগ্ন ১১ তলা ভবনের ৭ তলার ১৮০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন- যার মূল্য ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা।

তথ্য মতে জানা যায়, এখানেই শেষ নয় বানানী বিশ্বাসের ঢাকা শ্যামলী সিনেমা হলের পিছনের রোডে একটি ৫ তলা ভবন রয়েছে। বনানী বিশ্বাসের অনিয়াম ও দূর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ায় ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার সার্বিক নিরঞ্জন দেবনাথ তার দূর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করেন এবং প্রমানিত হওয়ায় উনি তৎকালীন জন-প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিকট একটি প্রতিবেদন প্রদান করেন।

‍‍পরবর্তী সময়ে বনানী বিশ্বাস অতি দ্রুত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব অসাধু মন্ত্রীদের ম্যানেজ করে তার দূর্নীতির বিষয়টি ধামাচাপা দেন। তখন তাকে ময়মনসিংহ বদলী করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। বনানী বিশ্বাস ছিলেন আওয়ামীলীগের একজন আস্থাভাজন আমলা। কয়েকবার তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সুনাম অর্জনের জন্য ওর সাথে এমপি মন্ত্রীদের টাকা পয়সা দিয়েছেন এবং কর্মক্ষেত্রে লাভবান হওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করেছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগকারী মো. মাহমুদুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কেবিনেট সচিব ও মন্ত্রণালয়ের কাছে আমার আকুল প্রার্থনা বনানী বিশ্বাসের মতো দুর্নীতিবাজ, অর্থ আত্মসাৎকারী মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবী জানাচ্ছি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, বনানী বিশ্বাস এর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার কেবিনেট সচিব এর সাথে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।

বনানী বিশ্বাসের দুর্নীতি ও অনিয়মের ‌এসব বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, তথ্য প্রমাণ সঠিক হলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পরিপেক্ষিতে বনানী বিশ্বাসের দুর্নীতি, অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত করে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Related

ময়মনসিংহ 1175998863150142895

আপনার মন্তব্য

emo-but-icon

সর্বশেষ খবর

    এক ক্লিকে বিভাগের খবর

    ফেসবুক

    সর্বশেষ খবর


    item